বাংলাদেশ থেকে দুবাই আরব আমিরাতে ভ্রমনের উপায়




দুবাই আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে একটি প্রদেশ। এটি পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ তীরে আরব উপদ্বীপে অবস্হিত। দুবাইয়ের প্রধান রাজস্ব আয় হচ্ছে পর্যটন, রিয়েল এস্টেট এবং অর্থনৈতিক সেবা।



প্লেন ভাড়াঃ ঢাকা টু দুবাই অনেক লোকাল এবং ফরেইন এয়ার যায়। টিকেট মূল্য প্লেনের উপর ডিপেন্ড করে। আমরা এমিরেটস এয়ারেই যেহেতু মিশর গিয়েছিলাম, তাই দুবাই এর ট্রানজিট থাকেই। এই কারণে দুবাই প্ল্যানিং।

ভিসাঃ আরব আমিরাতের ভিসা করা অত্যন্ত সহজ। আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে অনেক এজেন্সিদের চুক্তিভিত্তিক জামানতের বিনিময়ে ভ্রমণ ভিসা দিয়ে থাকে। আর এই সকল এজেন্সি তাদের ট্রাস্টের উপর UAE ভিসার প্রসেস করে নেয়। যেমন আমিরাতের ভিসা পেতে আপনাকে আপনার অরিজিনাল পাসপোর্ট বা ছবি কিছুই দিতে হবে না। এজেন্সি আপনার পাসপোর্ট আর ছবির সফটকপি দিয়েই এপ্লাই করবে। আমি আমার অনলাইন ভিসা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পেয়েছি! ভ্রমণ ভিসার মেয়াদ থাকে ৬০ দিন। আপনাকে এর মধ্যেই আপনার ভ্রমণ শেষ করতে হবে।

হোটেলঃ দুবাইয়ে আপনি ভিন্ন ভিন্ন রেটের ভিন্ন ভিন্ন হোটেল পাবেন। আপনার বাজেট অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন আপনার হোটেল। তবে দুবাইয়ে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো Dubai Downtown, Dubai Marina, Jumeirah beach আর The Palm Jumeirah। Downtown হচ্ছে শহরের সুউচ্চ অট্টালিকার মাঝে বসবাস। আপনি যদি Burj Khalifa ভিউ সহ হোটেলে থাকতে চান তবে আপনাকে বেছে নিতে হবে Dubai Downtown। Jumeirah beach আর The Palm Jemeirah হচ্ছে সী ভিউ। হোটেলগুলার ভাড়াও তুলনামূলক বেশী।

১ম দিনঃ (মিশর টু দুবাই/দুবাই মল-দুবাই এক্যুরিয়াম/বুর্জ খলিফা/দুবাই ফাউন্টেন/Dhow Cruise at Dubai Marina)
আমরা দুপুর ১২.০৫ মিনিটের ফ্লাইটে মিশর থেকে দুবাই ফ্লাই করি। পৌছাতে সময় লাগলো ৩.৩০ ঘন্টা। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম হোটেলে। আমাদের হোটেল ছিল দুবাই মলের পাশেই। আর রুম নিয়েছিলাম সুইমিংপুল আর বুর্জ-খলিফা ভিউসহ। নির্দিষ্ট সময় পরপর হোটেল থেকে বিভিন্ন স্পটে যাওয়ার জন্য ফ্রি শাটলের ব্যবস্থা ছিল।
বিকেলে ফ্রেশ হয়ে হোটেল সুইমিংপুল থেকে বুর্জ খলিফা ভিউ সহ কিছু ছবি তুলে গেলাম দুবাই মল। দুবাই মল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শপিং সেন্টার। এখানে শপিং ছাড়াও আছে বিশাল একুরিয়াম। এর জন্য আপনাকে অবশ্য টিকেট করতে হবে। টিকেটের ভিন্নতা আছে। মিনিমাম টিকেট প্রতিজন ৫৫ দিরহাম থেকে শুরু। এছাড়া ফুড কোর্ট আছে ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, এরাবিয়ান, ইতালিয়ানসহ অনেক খাবার। আমরা ফুড কোর্ট থেকে খাবার খেয়ে চলে গেলাম dubai fountain আর burj khalifa। এটা দুবাই মলের সাথেই লাগানো। দুবাই ফাউন্টেইনের ৫ মিনিটের রিগুলার শো হয় ৩০ মিনিট পরপর। এটা দেখার জন্য কোনো ফি নাই। একপাশে ফাউন্টেনে পানির ড্যান্স আর অন্যপাশে বুর্জ খলিফা! এককথায় অসাধারণ!! সন্ধ্যার পরে বুর্জ খলিফায় আবার LED light show হয়। রংবেরঙের এই লাইট শো দেখতে দারুণ লাগে। এটা সন্ধ্যার পর সাধারণত ৩/৪ বার হয়, আর টাইমিং টা বার অনুযায়ী ভিন্ন হয়। ফাউন্টেন আর লাইট শো দেখে আর কিছু ছবি তুলে আমরা রওনা দেয়। রাতে Dubai Marina তে Dhow Cruise with Dinner মাস্ট ট্রাই। সুন্দর আকর্ষণীয় কাঠের নৌযানে করে ভ্রমণ, লাইভ শো আর ব্যুফে ডিনার এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই প্যাকেজ সাধারণত ২/৩ ঘন্টার হয়। আপনি এই প্যাকেজ অনলাইন অথবা হোটেল থেকে বুক করতে পারেন।




২য় দিনঃ (Desert Safari/Burj Khalifa at the Top/Movie at Cineplex)
সকালে ব্রেকফাস্ট করে রেস্ট নিয়ে অনলাইনে দুবাই সাফারির টিকেট কনফার্ম করলাম। এরপর বের হলাম বিশ্বের সর্বোচ্চ লাউঞ্জ Burj Khalifa 'At The Top' এর উদ্দেশ্যে। ১৫৬ তলার উপর থেকে দুবাই শহর দেখা ছিল অবাক করা! প্যাকেজ টিকেট দুই ধরনের। ১২৪-১২৫ তলা (১৩৫ দিরহাম থেকে শুরু) এবং ১৫৪-১৫৬ ইনক্লুডিং ১৪৮ আর ১২৪-১২৫ তলা (৫০০ দিরহাম থেকে শুরু)। এখানের গ্রাউন্ড থেকে ১২৫ তলা উঠতে লিফটে লাগে বরাবর ১ মিনিট!! আমরা সর্বোচ্চ ১৫৬ তলার প্যাকেজটা নেয়। এর সাথে ব্যুফে স্নাকস ছিল ১৪৮ তলার রেষ্টুরেন্টে। পুরো দুবাই শহর দেখা যায় এখান থেকে। ৩ ঘন্টার মতো থেকে আমরা চলে যায় হোটেলে। সেখান থেকে দুবাই সাফারির উদ্দেশ্যে গাড়ি আসবে ৩ টায়। দুবাই সাফারি দুপুর ৩ টা থেকে রাত ৯/১০ টা পর্জন্ত হয়। কয়েকটা প্যাকেজ থাকে। এর মধ্যে আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনি কোন প্যাকেজটাই আগ্রহী। অবশ্যই প্যাকেজ অনুযায়ী প্যাকেজ মূল্যয় ভিন্নতা আছে।
আমাদের প্যাকেজ মূল্য ছিল জনপ্রতি ২৮০ দিরহাম। ৬ সিটের জিপ এসে আমাদের হোটেল থেকে আমাদের পিক করে। গাড়িতে আগে থেকেই মোটামুটি বয়স্ক এক ইউক্রেনের কাপল ছিলেন। এরপর ড্রাইভার আরেকটা হোটেল থেকে আর একটা কাপল তুললেন (সিংগাপুরের)। এই টোটাল ৬ জন যাত্রী নিয়ে ড্রাইভার মরুর বুকে রওনা দেয়। দুরত্ব মোটামুটি অনেক। যাওয়ার পথে ড্রাইভার আমাদের দুবাই এর বাদশাহ প্যালেস গাড়ি করেই ঘুড়িয়ে দেখিয়ে নিয়ে যায়। এরপর মরুভূমিতে ঢোকার আগে একটা ফিলিং স্টেশনে থামিয়ে চাকা চেইঞ্জ করে। এখানে আরো কিছু গাড়ি আরো কিছু যাত্রী নিয়ে একত্রিত হয়ে মরুভূমির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এই সময়ের মধ্যে স্টেশনের সুপার স্টোরে ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খাবার আর জুস খেয়ে নিলাম সবাই। আর ১০ মিনিট পর আবার রওনা দিলাম। মরুভূমিতে ঢোকার সাথে সাথেই শুরু হলো এক অসাধারণ এডভেঞ্চারাস জার্নি! সারি সারি জীপ এক লাইনে উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা বালির পাহাড় ডিংগিয়ে যাওয়া এক অনন্য অনুভুতি। এইসময় গাড়িতে স্থির হয়ে বসে থাকা অসম্ভব। ঝাকুনি হয় প্রচুর। তাই কারো হার্টের সমস্যা থাকলে এই জার্নি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। জার্নির মাঝে মাঝে কিছু জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ থাকে। প্রায় ১ ঘন্টা পর আমরা পৌছায় বেদুইন আদতে গড়া ক্যাম্পে। পৌছানোর সাথে সাথে ভালোমানের স্ন্যাকস আর আনলিমিটেড সফট ড্রিংক্স সার্ভ করা হয়। কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পরসবার জন্য buffet bbq dinner সার্ভ করা হয়। এর কিছুক্ষন পরই শুরু হয় Arabian Show, এরপর শুরু হয় Belly Dance। অসাধারণ আয়োজন আর সুস্বাদু খাবার দাবার শেষ করে আমরা আবার হোটেলের পথে রওনা দেই। জীপ আমাদের হোটেলে নামিয়ে দেয়। আমাদের হোটেলে সিনেপ্লেক্স ছিল। আর হোটেল গেস্ট হওয়াতে মুভির টিকেট ছিল কম্পিলিমেন্টারি! তাই কয়েকটা মুভির মধ্যে লেট নাইট শো থেকে আলাদিন (Aladin) মুভি টা লেট শো দেখি।

৩য় দিনঃ (Jumeirah beach/Jumeirah Beach Resort/Burj Al Arab/Dubai Mall/ Gold Souk)
এইদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করে বের হয়ে যায় Jumeirah beach এ। বীচের পাশে থেকে চলে যায় Jumeirah beach resort এ। এই ফাইভ স্টার হোটেলের রেস্টুরেন্টে হালকা স্ন্যাকস আর কফি খেয়ে চলে যায় এই রিসোর্টের প্রাইভেট বীচে। এই বীচ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম Seven Star হোটেল Burj Al Arab এর গা ঘেষানো (বুর্জ আল আরবে বুকিং ছাড়া এন্ট্রি একদমই নিষিদ্ধ) এই বীচ খুবই পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি। রিসোর্টের নিজস্ব বলে এর যত্ন নেওয়া হয় অনেক। এখানে দেখার মতো আরো আছে The Palm Jumeirah। এরপর আমরা চলে যায় দুবাই মলে। দুবাই মল থেকে শপিং ও লাঞ্চ করে চলে যায় Dubai Gold Souk। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্নের মার্কেট।

এছাড়া দুবাইয়ে আপনি দেখতে বা করতে পারেন-

-Dubai Butterfly Park (must go)
-Dubai Miracle Garden (seasonally open)
-Al Fahidi Fort
-Amusement park
-Sky dive (must do but expensive) (desert-1699 Dirham & palm sea-2199 Dirham)
-City tour by bus
-Helicopter city Tour
-Ice ski dubai
-One Day Abu Dhabi tour (must visit)
-Dubai Waterpark etc.

#মনে রাখা জরুরিঃ

√ কারেন্সিঃ ১ দুবাই দিরহাম=২৩-২৪ টাকা
√ মানি এক্সচেঞ্জঃ দুবাই এ ডলার ভাংগাতে হলে এয়ারপোর্টে না ভাংগিয়ে শহরে ভাংগানো সাশ্রয়ী। এয়ারপোর্টে রেট অনেক কম দেয়। আবার ট্যাক্স-ও কাটে। তাই ডলার ভাংগানোর আগে ট্যাক্স বা সার্ভিস চার্জ এর ব্যাপারে ক্লিয়ার হয়ে নিবেন।
√সিমঃ সিম চাইলে এয়ারপোর্ট থেকেই নিতে পারেন। দুবাইয়ে অনলাইন ডিডিও কল নিষিদ্ধ। তাই আপনি চাইলেই অনলাইনে ভিডিও কল করতে পারবেন না৷ (ব্যতিক্রম থাকতে পারে!) এটা সিমের দোকান থেকেই আপনাকে বলে দিবে। ওরা আমাদের অনলাইন এপ্স কলও করতে না পারার কথা বলেছিল। কিনতু আমি whatsapp এ কথা বলেছি।
√ যে কোন প্যাকেজ অনলাইনে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে। প্যাকেজ প্রাইজ অনলাইন আর হোটেলের মধ্যে তারতম্য থাকে। যেমন আমার desert safari প্যাকেজ ছিল ২৮০ দিরহাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখি আমাদের গ্রুপের কয়েকজন প্যাকেজ নিয়েছে প্রতিজন ৫৫০ দিরহাম করে!
আর অনলাইন প্যাকেজ অবশ্যই যাত্রার ২/৩ দিন আগে করা শ্রেয়। কেননা সিট ক্যাপাসিটি থাকায় ভালো প্যাকেজ গুলো আগেই বুক হয়ে যায়!
√হোটেল booking.com/hotels.com বা এইরকম অনলাইন হোটেল বুকিং সাইট থেকে করা সাশ্রয়ী।


Cost Summery (per person):

ভিসাঃ ৳ ৯৫০০
বিমান ভাড়াঃ ৳ ৪০, ০০০ থেকে শুরু (রিটার্ন সহ)
হোটেলঃ ৳৬০০০-আনলিমিটেড (রুমপ্রতি)
খাবার প্রতিবেলাঃ ডিপেন্ডস অন ইয়্যু! (৳১০০০ এভারেজ)
Desert Safari: প্যাকেজ মূল্য USD 50 থেকে শুরু (ডিনারসহ)
Drow Cruise: প্যাকেজ USD 30 থেকে শুরু(ডিনারসহ)
Dubai Acquirium: ৫৫ দিরহাম থেকে শুরু
Burj Khalifa: ১৩৫ দিরহাম থেকে শুরু

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ