খাবারে অরুচি হবার কারণ ও প্রতিকার

Causes-and-remedies-for-food-cravings

খাবারে অরুচি হবার কারণ ও প্রতিকার

খিদে পায় না, কিছু খেতে ইচ্ছে করে না বা খাবার রুচি নেই। মাঝেমধ্যে অনেকেই এমন সমস্যার কথা বলেন। কখনো সাধারণ জ্বর, সংক্রমণ, গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় খাবারের রুচি কমে যায়। আপাত এই ছোট সমস্যাটি হতে পারে বড় মারাত্মক কোনো রোগের লক্ষণ। সাধারণ ভাইরাস জ্বরেও খাদ্যে রুচি কমে যায়। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করে বড় সমস্যা। এ সময় প্রচুর তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়, যা পরিমাণে কম হলেও যেন শক্তি উৎপন্ন করতে পারে।

প্রচণ্ড অরুচি, বমিভাব এমনকি পছন্দের খাবারেও অনীহা দেখা দিলে লক্ষ করুন প্রস্রাব ও চোখের রং হলুদ হচ্ছে কি না। এটি হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। কিডনি জটিলতায় খাবারে রুচি কমে যায়। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসে খাদ্যনালির সংকোচন-প্রসারণ কমে যায় বলে অল্প খেলেই পেট ভরা মনে হয়। একবার খেলে অনেকক্ষণ আর খিদে পায় না। পেটে গ্যাস হলে বা বদহজম হলেও এমন বোধ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া যেতে পারে। মানসিক চাপ ও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলেও রুচি কমে যায়। ওজন হ্রাস নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ক্ষুধামান্দ্যর সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ওষুধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক খাবারের রুচি কমিয়ে দিতে পারে। তবে অরুচির সঙ্গে অন্য কিছু ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ থাকলে শিগগিরই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত। কেননা কেবল অরুচিই হতে পারে বিভিন্ন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। খেয়াল রাখুন অরুচির সঙ্গে ওজন কমে যাচ্ছে কি না, রক্তশূন্যতা আছে কি না, দুর্বলতা, খাবার গিলতে সমস্যা, পেটের ব্যথা, দীর্ঘদিনের হজমে গোলমাল, পেটে বা শরীরের কোথাও চাকা ইত্যাদি রয়েছে কি না। এসব লক্ষণ থাকলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। [১]

খেতে অনীহা, পেটব্যথা?

পেটে গ্যাস, পেটব্যথা, খেতে অনীহা, অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা—এই সবকিছু মিলেমিশেই পেপটিক আলসারের উপসর্গ। ভোগেননি এমন মানুষ বিরল। কিন্তু এই গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসারের পেছনে যে আসলে একধরনের জীবাণু কাজ করে, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।
এই জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার নাম হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি, যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের, বিশেষত পাকস্থলীর ভেতরের আবরণীকলার দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ এবং ক্ষতের জন্য দায়ী। পাকস্থলীর পেপটিক আলসার বা ক্ষতের ৭০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্ষতের ৯০ শতাংশ কারণ হচ্ছে এই জীবাণু।
পানি, খাবার, লালা, বমি-মল ইত্যদির মাধ্যমে এই জীবাণু আমাদের অল্প বয়সেই পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে এবং এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়াতে থাকে। ঘনবসতি, অনিরাপদ পানি ও দুর্বল পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা এ জীবাণুর প্রাদুর্ভাবে সহায়তা করে।

উপসর্গ:  ওপরের অংশে মোচড়ানো ব্যথা, পেটে জ্বালাপোড়া, বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপা, খাবারে অরুচি, বমিভাব বা বমি, মুখের দুর্গন্ধ ইত্যাদি।
জটিলতা: জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ শতাংশের পাকস্থলী,ÿক্ষুদ্রান্ত্রের ভেতর আবরণীকলায় ক্ষত দেখা দেয়। অনেক সময় এ ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। ক্ষত গভীরতর হয়ে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়ে রক্তবমি, কালো মল, এমনকি অন্ত্র ফুটো হয়ে জীবনসংশয় দেখা দিতে পারে। গবেষণা বলছে, পরিপাকতন্ত্রের লসিকা গ্রন্থির টিউমার বা লিম্ফোমার পেছনেও এর হাত রয়েছে।

চিকিৎসা কী?
এখন পর্যন্ত এই ব্যাকটেরিয়ার কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, অনিদ্রা, ধূমপান, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। এর চিকিৎসায় একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক এবং প্রটন-পাম্প ইনহিবিটর সমন্বিত ১০-১৪ দিনব্যাপী একটি কোর্স সেবন করতে হয়। জীবাণু নির্মূল হলো কি না, তা দেখার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের চার সপ্তাহ পর ইউরিয়া ব্রেথ টেস্ট অথবা মলে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া যেতে পারে এবং নির্মূল না হলে আবার আরেকটি কোর্স নিতে হবে। [২]

অরুচি ও ক্ষুধা মন্দার কয়েকটি কারণ
গত কয়েকদিন থেকে কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। সকালে নাস্তা করতে গেলেও পেটটা কেমন জানি ভার ভার লাগে। অথচ রাতেও পেট ভরে আহামরি কিছুই খাওয়া হয়নি। তাহলে এমনটা লাগছে কেন? আরো প্রশ্ন আসতে পারে হঠাৎ করে ক্ষুধা কমে যাওয়াটা জটিল কোনো রোগের লক্ষণ নয়তো!
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরকে সচল রাখতে জ্বালানির প্রয়োজন রয়েছে। আর এই জ্বালানির যোগান দেয় খাবার। তাই তো অরুচি বা ক্ষুধামন্দা হলে প্রথমেই বুঝতে হবে যে হজম ক্ষমতার কোনো গোলযোগ দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে হজম সম্পর্কিত শরীরের একাধিক অঙ্গ হয়তো ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। আর এটাকে মোটেও হালকাভাবে নেয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

নিম্নে হঠাৎ অরুচি ও ক্ষুধা মন্দার কয়েকটি কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
পেটে গ্যাস: তলপেটে ব্যথা সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যাচ্ছে। এমনটা দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রমে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই বেশি সময় পেট খালি রাখবেন না। প্রতিটি মিলের ৩-৪ ঘণ্টা পর কিছু না কিছু খাবেন।

লিভারের সমস্যা: হঠাৎ করে ক্ষুধা তো কমছেই সেই সঙ্গে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং ডায়ারিয়ার মতো সমস্যাও হচ্ছে। এমন সব লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে আপনি হয়তো কোনো লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ লিভার ফাংশন ঠিক মতো না হলেই সাধারণত এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে এক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ফাঙ্গাল ইনফেকশন: ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেও ক্ষিদে কমে যেতে পারে। যেমন ধরুণ, মুখে সংক্রমণ হলে খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না। ফলে অরুচি দেখা দেয়।

ভিটামিনের অভাব: শরীরে আয়রন এবং ভিটামিন বি১২-এর মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে হ্রাস পেলে এমন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই হঠাৎ ক্ষুধা কমে গেলে সময় নষ্ট না করে একটা ব্লাড টেস্ট করে নেবেন। এছাড়া ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে ক্লান্তি, কনস্টিপেশন, দাঁত থেকে রক্ত পরা প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মানসিক সমস্যা: মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়লে আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে যেতে শুরু করে ক্ষুধাও। এক্ষেত্রে নিজেকে শান্ত রাখতে হবে।

অ্যানোরেক্সিয়া: অ্যানোরেক্সিয়া নামে একটি রোগের কারণেও ক্ষুধা কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে খিদে কমে যাওয়ার পাশপাশি মারাত্মকভাবে ওজন কমতে শুরু করে। আপনার ক্ষেত্রে এমনটা হলে চিকিৎসকের পরমার্শ নিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।

অবসাদ: এর কারণেও অরুচি হতে পারে। সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের কারণে অনেক সময়ই ক্ষুধা কমে যায়।

ওষুধ: কিছু ওষুধের কারণেও ক্ষুধা মন্দা হতে পারে যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক, মরফিন এবং কেমোথেরাপির ওষুধ চলতে থাকলে খাবার ইচ্ছা কমে যায়।

ক্যানসার: ক্যানসারে আক্রান্ত হলেও মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যায়। যেমন, স্টমাক ক্যানসার, কোলোন ক্যানসার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার এবং ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত হলে এমনটা হয়ে থাকে।

অ্যালঝাইমার: এ রোগে আক্রান্ত হলেও খাবার খাওয়ার ধরনে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও মরে যায়।
এছাড়া হার্ট অ্যাটাকের কারণেও অনেক সময় ক্ষুধা কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। তাই আপনার বয়স যদি ৬৫ বছর হয় এবং ক্ষিদে কমে যেতে থাকে, তাহলে সাবধান হন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। [৩]

খাবারে রুচি বাড়াতে করণীয়
খাবারে প্রচণ্ড অরুচি, কিছুই মুখে নিতে ইচ্ছে করে না। এমন দিন অনেক সময় আসে। অনেক কারণেই এটা হতে পারে। যকৃতের সমস্যায়, জন্ডিসে রুচি কমবেই। পাকস্থলীর বা অন্ত্রের সমস্যায়, অম্লতায়, সংক্রমণ বা ক্যানসারের কারণে বিশ্রি ধরনের অরুচি হয়। কিডনির রোগীদেরও একই সমস্যা। নানা ধরনের ওষুধে রুচি কমে যেতে পারে। এমনকি বিষন্নতায় বা উদ্বেগজনিত মানসিক রোগেও এটা হতে পারে। আবার এমন হতে পারে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও রুচি কমার কোনো কারণ পাওয়া যায় না। তার মানে হয়তো খাবারটাই হয়ে পড়ছে ক্লান্তিকর ও বিস্বাদ। বড় কোনো রোগবালাই ছাড়া রুচি কমে এলে তা বাড়ানোর কিছু উপায় চেষ্টা করা যায়।

পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন
যাঁরা বেশি খেতে পারছেন না বা খেতে ইচ্ছে করে না, তাঁরা এমন খাবার বেছে নিন, যা কম খেলেও বেশি পুষ্টি দেবে। যেমন, শাকসবজি বা ফলমূল, গোটা শস্য, বাদাম, বীজজাতীয় খাদ্য এবং আমিষ। যেমন, মাছ, মাংস বা দুধ। চিপস, বেকিং করা খাবার, ফাস্ট ফুড পেটের ভরা ভরা ভাব আরও বাড়াবে এবং খিদে আরও কমিয়ে দেবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এবং মাছ ও মুরগির আমিষ মস্তিষ্কের খিদে কেন্দ্রকে উজ্জীবিত করে। একবারে বেশি পরিমাণে না খেতে পারলে বারবার অল্প পরিমাণে খান।

খাবারকে দৃষ্টিনন্দন করুন
বিজ্ঞানীরা বলেন, আমরা কেবল মুখ ও জিভ দিয়ে খাই না, চোখ-নাক দিয়েও খাই। মানে খাবারের স্বাদ কেবল নয়, গন্ধ, রং ও চেহারাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাদ্য প্রস্তুতের সময় খাবারের চেহারার দিকে মনোযোগ দিন। বিভিন্ন রং ও স্বাদ যোগ করুন। যেমন—ক্যাপসিকাম, লেটুস, টমেটো ও বিভিন্ন রঙের ফলমূল। গন্ধ বাড়াতে লেবুর রস, সিরকা, সরিষা, বিভিন্ন মসলা।

খাওয়ার সময় বেশি পানি নয়
পানি বা তরল খাবেন দুটি আহারের মধ্যবর্তী সময়ে। আহারের মাঝখানে নয়। খাওয়ার সময় বেশি পানি বা পানীয় খেলে পেট অল্পতে ভরে যাবে। কফি-চা-জুস ইত্যাদি বেশি গ্রহণ করলেও খাবারের ইচ্ছে কমে আসে।

বন্ধু ও ব্যায়াম
একা একা খাওয়ার তুলনায় পছন্দের সঙ্গী বা বন্ধুবান্ধব থাকলে খাবারের রুচি বাড়ে—এটা পরীক্ষিত সত্য। তাই মাঝেমধ্যে অতিথি আপ্যায়ন করা ভালো। প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করুন। এতে মেটাবলিজম বাড়বে এবং খিদে বাড়বে।

ভিটামিন কি রুচি বাড়ায়?
অনেকেই রুচি বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের ভিটামিন বা টনিক খেয়ে থাকেন। আদতে ভিটামিন বড়ি বা টনিক রুচি বাড়ায় না। তবে একমাত্র যে ভিটামিন রুচি বাড়াতে কিছুটা সাহায্য করে তার নাম ফলিক অ্যাসিড বা ফলেট। মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের গবেষকেরা দেখিয়েছেন যে ফলিক অ্যাসিড রুচি কেন্দ্র বা এপিটাইট সেন্টারকে উজ্জীবিত করতে পারে। এই ভিটামিন পাবেন গাঢ় পাতাবহুল সবজি যেমন শাক, সরিষাশাক, বাঁধাকপি, বিট, বীজজাতীয় শস্য ইত্যাদিতে। এ ছাড়া পাবেন কলিজা ও কমলার রসেও। [৪]

আপনার শিশু খেতে চায় না?
বেশির ভাগ অভিভাবকের অনুযোগ, তাঁর শিশুসন্তানটি কিছু খেতে চায় না। শিশুদের খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চাইল্ড ফিডিংয়ের দিকনির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু সংস্থার পরামর্শ রয়েছে। তারা বলছে—

১. শিশু বসতে শেখার পরপরই তাকে নিজে নিজে খাবার খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। বিভিন্ন খাবারের রং, ধরন, গন্ধ শেখার পাশাপাশি তা ধরতে ও খাওয়ার মাধ্যমে শিশু খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

২. শিশুকে কখনোই জোর করে কিংবা বকা দিয়ে বা মারধর করে খাওয়ানো যাবে না। উৎসাহ দিয়ে ও প্রশংসা করে শিশুকে খাওয়াতে হব। মনে রাখতে হবে, কোনো কোনো সময় শিশুর বৃদ্ধির গতি কিছুটা হ্রাস পায়। শিশু কখনো কখনো নিষ্ক্রিয় থাকে, সেসব সময় তার খাবারের চাহিদাও কমে আসে।

৩. শিশুকে সকাল, দুপুর ও রাতের মূল খাবারের মধ্যে দুবার হালকা নাশতা দেওয়া প্রয়োজন। যখন-তখন খাবার খাওয়াতে জোর করবেন না। খাবারের সঠিক সময়সূচি থাকা চাই। নাশতা যেন খুব ভারী না হয়। আর তা যেন মূল খাবারের কাছাকাছি সময়ে দেওয়া না হয়।

৪. অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকেরা একই পরিমাণ নাশতা ও মূল খাবার শিশুকে দিয়ে থাকেন, যা তার ক্ষুধামন্দা তৈরি করে। তাই নাশতার পরিমাণ কম ও মূল খাবার বেশি হওয়া দরকার।

৫. শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি খাবারে বৈচিত্র্য আনতে হবে। যেমন শিশুকে বলা যেতে পারে, ‘তুমি আপেল নাকি আম কোনটা খেতে চাও?’ শিশু যেটা খেতে চাইবে, সেটাই তাকে দিতে হবে।

৬. শিশুকে ফলের রস বা জুস না খাইয়ে আস্ত ফল খাওয়ান। খুব বেশি পরিমাণে তরল খাওয়ালে শিশুর পেট ভরে যাবে, কিন্তু পুষ্টির চাহিদাতে ঘাটতি দেখা দেবে।

৭. শিশুকে চকলেট, চিপস, জুস ও ফাস্ট ফুড-জাতীয় খাবার যত কম দেওয়া যায় ততই ভালো। এসবে শিশুর ক্ষুধা কমে যায়, সহজে আর খিদে পায় না। শিশু মূল খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

৮. একই ধরনের খাবার বারবার খাওয়াবেন না। খাবারে বৈচিত্র্য আনা জরুরি।

৯. শিশুকে তার খাওয়ার সময় বেঁধে দিন ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে। ওই সময়ের মধ্যে শিশু তার বরাদ্দ পরিমাণ খাবার শেষ করতে না পারলে সরিয়ে নিন, জোর করবেন না। শিশুকে আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে খাওয়ালে শিশুর মধ্যে অরুচি তৈরি হয় এবং হজমে ব্যাঘাত ঘটে।

১০. টেলিভিশন বা গেম দেখতে দেখতে শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। পরিবারের সবাই একত্রে বসে শিশুকে সঙ্গে নিয়ে খেলে খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে শিশু। [৫]

[১] ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন
মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
[২] ডা. নাজমুল কবীর কোরেশী
মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
[৩]-[৪] অনলাইন ডেস্ক
[৫] আসফিয়া আজিম, জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ