বিনিয়োগে সুখবর দিচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩টি সরকারি ও ১০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৭৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি।
বিনিয়োগকারীরা সরকারি তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭৭টি কোম্পানি–নির্ধারিত ইজারামূল্যে জমি নিয়ে কেউ কারখানার কাজ শুরু করেছে, কেউ জমি হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। সে তুলনায় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এগিয়ে। সেখানে ৩৯টি কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য জমি নিয়ে ২০টি ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে পণ্য বিদেশে রপ্তানিও শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ডলার।
সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো বিনিয়োগকারীদের জমির সমস্যা কমিয়ে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবা সংযোগ এবং অবকাঠামোর নিশ্চয়তা পাচ্ছে।
সব মিলিয়ে সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির লক্ষ্য ঠিক করেছে। বেজা জানিয়েছে, এখন জোরেশোরে কাজ চলছে ২৮টির। এর মধ্যে ১৩টি সরকারি খাতে। বেসরকারি খাতে ১৫টি। অবশ্য বেসরকারি খাতে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়ে জমি বরাদ্দ ও বিনিয়োগ নিতে পারছে। অন্যদিকে সরকারি খাতে তিনটিতে ইতিমধ্যে জমি বরাদ্দ শুরু হয়েছে, দুটিতে বরাদ্দের আবেদন নেওয়া হচ্ছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জমি পাওয়ার দুর্ভোগ আর থাকবে না। বেজার হাতে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার একরের মতো জমি এসেছে। তিনি বলেন, ‘এখন যে বিনিয়োগ আসছে, সেগুলো শুধু প্রস্তাব নয়, বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে তারা জমি নিচ্ছে। এর বাইরেও প্রচুর প্রস্তাব আছে। আমাদের এখন সহায়তা ও নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বিনিয়োগকারীদের কারখানা করার বিষয়টি নির্বিঘ্ন করতে হবে।’
কোথায় কত বিনিয়োগ
চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও ফেনী ঘিরে ৩০ হাজার একর জমি গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। সেখানেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। বেজার হিসাবে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রস্তাব ১ হাজার ২৩৯ কোটি ডলারের। এতে জমি নিয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান। মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি নিয়েছে ২টি প্রতিষ্ঠান। তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ২৪৮ কোটি ডলার। অন্যদিকে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের পুরো জমি নিয়ে নিয়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠান। তাদের মোট বিনিয়োগ প্রস্তাব ১৩১ কোটি ডলার।
বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৬টিতে বিনিয়োগকারীরা কারখানা করছে। এর মধ্যে মেঘনা ইকোনমিক জোনে ১০টি, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে ১৫টি, সিটি ইকোনমিক জোনে ৬টি, আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে ১টি, আমান ইকোনমিক জোনে ৫টি ও বে ইকোনমিক জোনে ২টি কোম্পানি কারখানা করছে। ৩৯টির মধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে ২০টি কারখানা।
জানতে চাইলে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সমিতির আহ্বায়ক ও আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাইনুদ্দিন মোনেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রায় প্রতিদিনই বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছি। বেজার মতো সরকারের অন্য সংস্থাগুলো সহায়তায় এগিয়ে এলে কাজটি সহজ হতো। কিন্তু মাঠপর্যায়ে অনেক কিছুই আটকে যাচ্ছে।’
0 মন্তব্যসমূহ